ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাচাঁতে পারলো না- সিমা বেগম

নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী : দীর্ঘ ১ মাস ২০ দিন যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বাবুল মৃধা (৪৭)। সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই এলোপাথাড়ি পুলিশের ছোড়া গুলিতে ধুকে ধুকে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত বাবুল মৃধা পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী শানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ২৫ বছর আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। তখন তিনি বিবাহ করেননি। তিনি প্রথমে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতেন, পরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার স্ত্রীর নাম সিমা বেগম। তার বড় ছেলের নাম আবু তালেব (১৭) ও ছোট ছেলে মাহিমের বয়স মাত্র ২ বছর। মা হনুফা বেগমসহ পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল পাঁচজন। তার পবিরবারটি কদমতলী থানা এরিয়ায় বসবাস করতেন।

আর-ও জানা গেছে, বাবুল মৃধার বড় ছেলে আবু তালেব যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় অধ্যায়নরত। প্রথম দিক থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ছিলেন আবু তালেব। দিনটি ছিল ১৯ জুলাই। সন্ধ্যায় আবু তালেব বাসায় না ফেরায় বাসার লোকজন উদ্বিগ্ন ছিল। বাবুল মৃধা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে বাসায় ফিরলে জানতে পারেন তার ছেলে বাসায় আসেনি। তাৎক্ষণিক ছেলের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে যখন লাকি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যান তখন রাত সাড়ে ৮টা।এ সময় কোথা থেকে যেন বাবুল মৃধার শরীরের বাম পাশের হাড়ের দিক দিয়ে একটি গুলি পেটে ঢুকে যায়। সাথে সাথে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

উপস্থিত ছাত্র জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নিয়ে যায়। গুরুতর বাবুল মৃধার মোবাইল দিয়ে বাসায় ফোন দেয়। ওই রাতেই বাবুল মৃধাকে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। তখন তার শরীরে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসায় তার ব্যায় হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ২৮ দিন ছিলেন। পরে পিলখানা হাসপাতালে ৪ দিন, সিএমএইচে ১৮ দিন। অবশেষে ১০ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বাবুল মৃধা।

নিহত বাবুল মৃধার মা হনুফা বেগম (৬৮) গণমাধ্যমকে জানান, আমার সংসার চালানো একমাত্র পোলাডারে কেন মারল? ওর দোষ কী ছিল? কে আমার মুখে ভাত দিবে? কে ওষুধ কিনে দিবে? বলতে বলতে গলার স্বর স্তব্ধ হয়ে গেল আর কথা বলতে পারলো না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাবুল মৃধার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি’র) জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য হাসান মামুন শোক জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোসা নাফিসা নাজ নীরা গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দশমিনায় নিহত পাঁচ ও আহত একজন। কিন্তু নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে স্ব স্ব এলাকায় এবং দু’জনকে ঢাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন নিহত তিন পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। আর ঢাকায় দাফন সম্পন্ন দুই নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তাদেরও সাহায্যের আওতায় আনা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা !

১৫ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাচাঁতে পারলো না- সিমা বেগম

Update Time : ০৫:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী : দীর্ঘ ১ মাস ২০ দিন যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বাবুল মৃধা (৪৭)। সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই এলোপাথাড়ি পুলিশের ছোড়া গুলিতে ধুকে ধুকে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত বাবুল মৃধা পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী শানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ২৫ বছর আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। তখন তিনি বিবাহ করেননি। তিনি প্রথমে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতেন, পরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার স্ত্রীর নাম সিমা বেগম। তার বড় ছেলের নাম আবু তালেব (১৭) ও ছোট ছেলে মাহিমের বয়স মাত্র ২ বছর। মা হনুফা বেগমসহ পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল পাঁচজন। তার পবিরবারটি কদমতলী থানা এরিয়ায় বসবাস করতেন।

আর-ও জানা গেছে, বাবুল মৃধার বড় ছেলে আবু তালেব যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় অধ্যায়নরত। প্রথম দিক থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ছিলেন আবু তালেব। দিনটি ছিল ১৯ জুলাই। সন্ধ্যায় আবু তালেব বাসায় না ফেরায় বাসার লোকজন উদ্বিগ্ন ছিল। বাবুল মৃধা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে বাসায় ফিরলে জানতে পারেন তার ছেলে বাসায় আসেনি। তাৎক্ষণিক ছেলের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে যখন লাকি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যান তখন রাত সাড়ে ৮টা।এ সময় কোথা থেকে যেন বাবুল মৃধার শরীরের বাম পাশের হাড়ের দিক দিয়ে একটি গুলি পেটে ঢুকে যায়। সাথে সাথে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

উপস্থিত ছাত্র জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নিয়ে যায়। গুরুতর বাবুল মৃধার মোবাইল দিয়ে বাসায় ফোন দেয়। ওই রাতেই বাবুল মৃধাকে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। তখন তার শরীরে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসায় তার ব্যায় হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ২৮ দিন ছিলেন। পরে পিলখানা হাসপাতালে ৪ দিন, সিএমএইচে ১৮ দিন। অবশেষে ১০ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বাবুল মৃধা।

নিহত বাবুল মৃধার মা হনুফা বেগম (৬৮) গণমাধ্যমকে জানান, আমার সংসার চালানো একমাত্র পোলাডারে কেন মারল? ওর দোষ কী ছিল? কে আমার মুখে ভাত দিবে? কে ওষুধ কিনে দিবে? বলতে বলতে গলার স্বর স্তব্ধ হয়ে গেল আর কথা বলতে পারলো না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাবুল মৃধার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি’র) জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য হাসান মামুন শোক জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোসা নাফিসা নাজ নীরা গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দশমিনায় নিহত পাঁচ ও আহত একজন। কিন্তু নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে স্ব স্ব এলাকায় এবং দু’জনকে ঢাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন নিহত তিন পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। আর ঢাকায় দাফন সম্পন্ন দুই নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তাদেরও সাহায্যের আওতায় আনা হবে।