নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা।।
পাটকলসহ বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, শ্রমিকদের সকল পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদান, মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতিযুক্ত বিজেএমসির সংস্কার করাসহ তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার, যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লিজ দেয়া হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন আছে সেগুলো বাতিল, ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এক্ট কার্যকর করা, কাঁচাপাট সরাসরি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃক যে সকল ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং খুলনায় আন্দোলন চলাকালীন শ্রমিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় খালিশপুর ক্রিসেন্ট গেটের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সহ- সভাপতি মোঃ মোশারেফ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শ্রমিকনেতা শামসেদ আলম শমসের, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সদস্য সচিব কোহিনুর আক্তার কণা, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খুলনা মহানগর কমিটির সদস্য বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস,পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি আবদুল করিম, গণসংহতি আন্দোলন ফুলতলা উপজেলা আহবায়ক ও ইস্টার্ণ জুটমিল শ্রমিকনেতা মোঃ অলিয়ার রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ।
ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি কবির জাহাঙ্গীর, শামীম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খালিশপুর থানা সংগঠক ইউনুস মাসুদ, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সহ-সম্পাদক আকতার হোসেন, আবদুর রহিম সুজন, কামরুল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ সেলিম, প্রচার সম্পাদক শামসুল আলম, দপ্তর সম্পাদক সুমন খন্দকার, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর সংগঠক ও জেজেই শ্রমিকনেতা সামস সারফিন সামন, ইস্টার্ণ জুটমিল শ্রমিকনেতা পিপলু সরদার প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনা মহামারির সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলসহ সারাদেশের ২৬টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ পাটসংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েন।
আকষ্মিক বন্ধের ফলে পাটকলশ্রমিকদের জীবন-জীবিকা স্থবির হয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে বিগত সরকার শ্রমিকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রæতিতে শ্রমিকদের পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা তখন তাদের কর্মস্থল থেকে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো খাবারের জন্য, চাকরী ফিরে পাবার আশায় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়। বক্তারা বলেন, পাটকল শ্রমিকরা আংশিক বেতন পেলেও সঠিক হিসাব অনুযায়ী সকল পাওনাদি এখনো পর্যন্ত পায়নি।
এমনকি খুলনার খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি ও আর আর জুট মিলের শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি। এসমস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবন কি দুর্বিষহ অবস্থায় চলছে তা একমাত্র তারাই জানেন। নিষ্ঠুরভাবে পাটকল বন্ধ, বকেয়া প্রদানে গড়িমসি ও ষড়যন্ত্রের শিকার শ্রমিকরা। সরকারের কাছে শ্রমিকদের এই দাবি একটি গণতান্ত্রিক দাবি, ন্যায্যত এটি শ্রমিকদের অধিকারও বটে। আমাদের যে বকেয়া পাওনা তা কোন করুণা নয়, এটা আামাদের ন্যায্য পাওনা। এই পাওনা মিটিয়ে দিতে হবেই, হবে।
উল্লেখ্যসবচেয়ে বিষ্ময়কার ঘটনা হলো, বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকটি মিল ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া হয়েছে, ক্রিসেন্ট জুটমিল লিজ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট, চুরি ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে বন্ধকৃত পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও শ্রমিকদের সম্পর্ণ বকেয়া পরিশোধের জোর দাবি জানান।