ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি নদীপাড়ে আতঙ্ক বিরাজ

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর : গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার একেবারে দিয়ে প্রবাহিত করায় নদীপাড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৩ টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় সকাল ৬ টায় ২৮ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় ২৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২ টায় ২৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। অপরদিকে একইদিন বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে এই পয়েন্টে সকাল ৬ টায় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২ টায় ২৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪ গেটই খুলে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে ভাটিরদিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার কোন আভাস পাওয়া যায়নি। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমান বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আমাদের এখানে নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। তবে বর্ষা মওসুমের আগে তিস্তায় পানি বাড়ায় নদী পাড়ের মানুষের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করে।কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, ভোর থেকে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। বর্ষার আগে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী ও চারঞ্চল গ্রামের মানুষদের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি বলেন, এসময় বন্যা হলে নদী পাড়ের মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে বাদাম ও শাক—সবজি সহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের কিছুটা ক্ষতি হবে। একাই কথা জানিয়েছেন টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম। চর গনাই গ্রামের বাসিন্দা আফতার আলী বলেন, ভোর থাকি নদিত পানি বারবের নাগছে। ভয়ত আছি পানি কনবা সময় বাড়ীর উঠানে উঠে। ঈদের আগত বন্যা হলে খুব বিপদে পড়ি যামো। একই এলাকার জয়নাল জানান, হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়েও বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) মহিদুল হক বলেন, বন্যার এখন পর্যন্ত আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সরকারীভাবে সকল ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। পাশাপশি স্থানীয় প্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা !

হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি নদীপাড়ে আতঙ্ক বিরাজ

Update Time : ০৯:০১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর : গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার একেবারে দিয়ে প্রবাহিত করায় নদীপাড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৩ টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় সকাল ৬ টায় ২৮ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় ২৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২ টায় ২৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। অপরদিকে একইদিন বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে এই পয়েন্টে সকাল ৬ টায় ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২ টায় ২৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪ গেটই খুলে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে ভাটিরদিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার কোন আভাস পাওয়া যায়নি। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমান বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আমাদের এখানে নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। তবে বর্ষা মওসুমের আগে তিস্তায় পানি বাড়ায় নদী পাড়ের মানুষের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করে।কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, ভোর থেকে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। বর্ষার আগে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী ও চারঞ্চল গ্রামের মানুষদের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি বলেন, এসময় বন্যা হলে নদী পাড়ের মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে বাদাম ও শাক—সবজি সহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের কিছুটা ক্ষতি হবে। একাই কথা জানিয়েছেন টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম। চর গনাই গ্রামের বাসিন্দা আফতার আলী বলেন, ভোর থাকি নদিত পানি বারবের নাগছে। ভয়ত আছি পানি কনবা সময় বাড়ীর উঠানে উঠে। ঈদের আগত বন্যা হলে খুব বিপদে পড়ি যামো। একই এলাকার জয়নাল জানান, হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়েও বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) মহিদুল হক বলেন, বন্যার এখন পর্যন্ত আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সরকারীভাবে সকল ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে। পাশাপশি স্থানীয় প্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।