ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর পর জান্নাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার আমল

ধর্ম ডেস্ক, বাংলাদেশ জনপদ  

মৃত্যুর পর জান্নাতে মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস। ঈমান ও আমলের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা পরকালে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ তাআলা জান্নাতে জান্নাতিদের পরিবার-সন্তানকে একত্র করবেন মর্মে পবিত্র কোরআনে দলিল রয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ اتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّیَّتُهُمْ بِاِیْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّیَّتَهُمْ وَ مَاۤ اَلَتْنٰهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَیْءٍ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে তাদের সঙ্গে মিলিত করব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।’ (সুরা তুর: ২১)

আয়াতের অর্থ ও মর্ম খুবই স্পষ্ট। জান্নাতি ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি যদি ঈমান ও আমলে সালেহের অধিকারী হয়, আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতাকে খুশি করার জন্য সন্তানদেরকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন, সন্তানদেরকে সেই স্তরে পৌঁছে দেবেন। যদি আমলের মাধ্যমে তারা পিতা-মাতার মতো জান্নাতের উচ্চ স্তর লাভ করতে নাও পারে, তবুও চক্ষু শীতলের জন্য তাদেরকে পিতা-মাতার পাশে রাখা হবে। এক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা পূর্বসূরীর স্তর বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। বরং তাঁদের মর্যাদা ও স্তর যথাস্থানেই থাকবে। (দ্র. তাফসিরে ইবনে কাসির: ৭/৪৩২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১১৩৭০; কাশফুল আসতার: ২২৬০)

পরিবার-সন্তান-সন্ততি নিয়ে একসঙ্গে জান্নাতে থাকার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- ১. নিজে পরিপূর্ণ দ্বীন-ঈমানের ওপর চলা, সন্তান-সন্ততি ও পরবর্তী প্রজন্মকেও সেভাবে গড়ে তোলা। ২. দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে পূর্বসূরীদের পরহেজগারি জীবন অনুসরণ করা। ৩. মা-বাবা ও সন্তান পরস্পরের কল্যাণে সহযোগী হওয়া। সহযোগী হওয়া বলতে মূলত মা-বাবার নেক আমল ও সন্তানের দোয়াকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ মা-বাবার নেক আমলের প্রভাবে সন্তান যেমন উপকৃত হয়, তেমনি সন্তানের দোয়ার বরকতে মা-বাবাও বিশেষ মর্যাদা লাভ করে থাকেন।

যেমনটি হাদিসে এসেছে- আল্লাহ তাআলা জান্নাতে অবশ্যই সালেহ ও নেককার বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। বান্দা বলবে, আল্লাহ, আমার জন্য এসব কোত্থেকে এল? আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার সন্তানদের দোয়ার মাধ্যমে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩০৩৫৯; মুসনাদে আহমদ: ১০৬১০; ইবনে মাজাহ: ৩৬৬০)

ঈমান ও শরিয়তের বিধি-বিধান পালন ছাড়া শুধুমাত্র বাপ-দাদা নেককার হওয়ার কারণে সন্তানদের এই মর্যাদায় পৌছা সম্ভব নয়। বরং তাদেরকেও ঈমান-আমলে পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে নবীজির একটি হাদিস হলো- ‘আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দিল, বংশমর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯) ইমাম নববি (রহ) বলেন, কাজেই বংশমর্যাদা ও বাপ-দাদার ঐতিহ্যের ওপর ভরসা করে বসে না থেকে নিজে আমলের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া কাম্য।’ (শরহু মুসলিম, নববি: ১৭/২৩)

অতএব আসুন, নিজেরা ঈমান-আমলে পরিপূর্ণ হই; পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মকেও সেভাবে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত্যুর পর জান্নাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার আমল

Update Time : ০১:২৩:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

ধর্ম ডেস্ক, বাংলাদেশ জনপদ  

মৃত্যুর পর জান্নাতে মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস। ঈমান ও আমলের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা পরকালে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ তাআলা জান্নাতে জান্নাতিদের পরিবার-সন্তানকে একত্র করবেন মর্মে পবিত্র কোরআনে দলিল রয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ اتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّیَّتُهُمْ بِاِیْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّیَّتَهُمْ وَ مَاۤ اَلَتْنٰهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَیْءٍ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে তাদের সঙ্গে মিলিত করব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।’ (সুরা তুর: ২১)

আয়াতের অর্থ ও মর্ম খুবই স্পষ্ট। জান্নাতি ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি যদি ঈমান ও আমলে সালেহের অধিকারী হয়, আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতাকে খুশি করার জন্য সন্তানদেরকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন, সন্তানদেরকে সেই স্তরে পৌঁছে দেবেন। যদি আমলের মাধ্যমে তারা পিতা-মাতার মতো জান্নাতের উচ্চ স্তর লাভ করতে নাও পারে, তবুও চক্ষু শীতলের জন্য তাদেরকে পিতা-মাতার পাশে রাখা হবে। এক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা পূর্বসূরীর স্তর বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। বরং তাঁদের মর্যাদা ও স্তর যথাস্থানেই থাকবে। (দ্র. তাফসিরে ইবনে কাসির: ৭/৪৩২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১১৩৭০; কাশফুল আসতার: ২২৬০)

পরিবার-সন্তান-সন্ততি নিয়ে একসঙ্গে জান্নাতে থাকার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- ১. নিজে পরিপূর্ণ দ্বীন-ঈমানের ওপর চলা, সন্তান-সন্ততি ও পরবর্তী প্রজন্মকেও সেভাবে গড়ে তোলা। ২. দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে পূর্বসূরীদের পরহেজগারি জীবন অনুসরণ করা। ৩. মা-বাবা ও সন্তান পরস্পরের কল্যাণে সহযোগী হওয়া। সহযোগী হওয়া বলতে মূলত মা-বাবার নেক আমল ও সন্তানের দোয়াকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ মা-বাবার নেক আমলের প্রভাবে সন্তান যেমন উপকৃত হয়, তেমনি সন্তানের দোয়ার বরকতে মা-বাবাও বিশেষ মর্যাদা লাভ করে থাকেন।

যেমনটি হাদিসে এসেছে- আল্লাহ তাআলা জান্নাতে অবশ্যই সালেহ ও নেককার বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। বান্দা বলবে, আল্লাহ, আমার জন্য এসব কোত্থেকে এল? আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার সন্তানদের দোয়ার মাধ্যমে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩০৩৫৯; মুসনাদে আহমদ: ১০৬১০; ইবনে মাজাহ: ৩৬৬০)

ঈমান ও শরিয়তের বিধি-বিধান পালন ছাড়া শুধুমাত্র বাপ-দাদা নেককার হওয়ার কারণে সন্তানদের এই মর্যাদায় পৌছা সম্ভব নয়। বরং তাদেরকেও ঈমান-আমলে পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে নবীজির একটি হাদিস হলো- ‘আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দিল, বংশমর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯) ইমাম নববি (রহ) বলেন, কাজেই বংশমর্যাদা ও বাপ-দাদার ঐতিহ্যের ওপর ভরসা করে বসে না থেকে নিজে আমলের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া কাম্য।’ (শরহু মুসলিম, নববি: ১৭/২৩)

অতএব আসুন, নিজেরা ঈমান-আমলে পরিপূর্ণ হই; পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মকেও সেভাবে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।