রিয়াজ ফরাজি, বোরহানউদ্দিন
ভোলার বোরহানউদ্দিনে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগে বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুবেল কে যুবদলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং একই অভিযোগে পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার রুহুল আমিন কে শোকজ করা হয়েছে।
আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে,ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে অসহায়-দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্ধকৃত আশ্রয়ন প্রকল্পের ২-৩ টি ঘরে পক্ষিয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার রুহুল আমিন এর সহায়তায় পক্ষিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সেকান্তরের বড় ছেলে পক্ষিয়া ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুবেল এর নেতৃত্বে তালা মেরে দেন এবং যে এই ঘরে উঠবে তাকে দেওয়া লাগবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এমনটাই দাবি করেন যুবদল নেতা রুবেল,পরে উপায় না পেয়ে কুলসুম নামে এক অসহায়-দুস্থ নারী ঋন করে ২০ হাজার টাকা দেন,২০ হাজার টাকার পরে স্থানীয় চৌকিদার রুহুল আমিন এর মাধ্যমে চাওয়া হয় আরো ১০ হাজার,না দিলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেবে এমন হুমকিও দেন তারা।
এ বিষয়ে কুলসুম বলেন,আমি অসহায় মানুষ থাকার জায়গা নেই,ছেলে পেলে নিয়ে থাকার জন্য সরকারের দেওয়া ঘর যুবদলের নেতা রুবেলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়া কিনে নিছি, আমারে ঘরে উঠাইয়া দিছে এখন আরো দশ হাজার টাকা চায়, আমি আমার টাকা ফেরত চাই এবং বিনামূল্যে ঘর পেতে চাই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা জানান, তার কাছ থেকে রুবেল ৫০০০/- টাকা দাবি করে ২ হাজার টাকা দেয়।
স্থানীয়রা জানান,রুবেল ও চৌকিদার এর নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত লোকজন আসে চাদা নেওয়ার জন্য, কেউ না দিলে দেওয়া হয় নির্যাতনের হুমকি।
এদিকে দলীয় একাধিক লোকজন জানান, রুবেল এ পর্যন্ত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাদা নিয়েছে, দলীয় পদ ও বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে এমনটাই করছেন তিনি বলে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনা এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে বিষয়টি নজরে আসে ভোলা ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম ও উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মাফরুজা সুলতানা, বিষয়টি শোনার সাথে সাথেই তারা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক সরোয়ার আলম খান ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মোঃ জসিম খানকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করলে গত ৩ নম্বর পক্ষিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কাজী মোঃ মোসলেউদ্দিন ও সদস্য সচিব মোঃ তৈয়বুর রহমান মাতাব্বর এর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা সত্যতা পাওয়ায় দলীয় পথ থেকে রুবেল কে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার যথাযথ প্রমাণ প্রমাণিত হওয়ায় পক্ষিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুবেলকে যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি ২০ হাজার টাকা নিয়ে চৌকিদারকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি আরো ১৫০০ টাকা বিভিন্ন জনকে ভাগ করে দিয়েছি টাকা ফেরত দিয়ে দেব, চৌকিদার রুহুল আমিন একই কথা স্বীকার করে বলেন আমার দোষ নাই রুবেল টাকা নিছে আমারে ৫ হাজার দিছে আমি টাকা দিয়ে দিমু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান বলেন, অপরাধী যে হোক ছাড় পাবে না, ছাড় দেব না যার অন্যতম উদাহরণ রুবেল,তার বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মোঃ জসিম খান জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ যুবদল,এ দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
যদি কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অসহায় মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাহলে আমরা তাকে ছাড় দেবো না,রুবেল আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে টাকার বিনিময়ে একজন অসহায়-দুস্থ মানুষ কে উঠিয়ে দিয়ে তার টাকা আত্মসাৎ করে যে অপরাধ করেছে সেটি আমাদের নজরে আসলে আমরা তাকে বহিষ্কার করি,এরকম যদি আর কেউ করে তার বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোঃ মোসলেহ উদ্দিন ও সদস্য সচিব মোঃ তৈয়বুর রহমান বলেন,আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে তালা মেরে রুবেল কিছু অসহায়-দুস্থ মানুষকে ঘরে উঠিয়ে দেওয়ার বিনিময় ২২ হাজার টাকা চাঁদাবাদি করেছে,ভুক্তভোগী পরিবার আমাদেরকে অভিযোগ দেওয়ার প্রেক্ষিতে ঘটনা প্রমানিত হওয়ায় আমরা তাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছি,পক্ষিয়া ইউনিয়ন যুবদল চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে সব সময় জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে অপরাধের সাথে যেই জড়িত থাকবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান-উজ্জামান বলেন, বিষয়টি শোনার সাথে সাথে আমি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসানকে ঘটনাস্থলে পাঠায়েছি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি তবে সেখানে ৭ থেকে ৮ টি ঘরে মানুষ না থাকায় যাদের নামে ঘর বরাদ্দ রয়েছে তাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছি এবং কুলসুমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া চৌকিদারকে শোকজ করা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।