ঢাকা ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভাবস্থায় নারীদের চা-কফি খাওয়া কি বারণ?

বাংলাদেশ জনপদ ডেস্ক : এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা কিংবা এক মগভর্তি কফি দিয়ে দিন শুরু করতে ভালোবাসেন কেউ কেউ। কাজের ফাঁকেও চা-কফি গ্রহণের চল রয়েছে। ক্লান্তিকর দিন পেরিয়ে বিকেলের আয়েশি সময়েও অনেকের চা-কফি খাওয়ার ঝোঁক থাকে। সাধারণ সময়ে সে আপনি যা-ই করুন না কেন, একজন নারী যখন মাতৃত্বের প্রথম ধাপ অর্থাৎ, অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, তখন গর্ভের সন্তানের ভালো– মন্দের কথা মাথায় রেখেই তাঁর জীবনযাত্রার ধরনধারণ নির্ধারণ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় খাবারদাবার গ্রহণের বেলায় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। চা-কফির বেলাতেও তাই।

স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ বলেন, চা- কফি গ্রহণের সঙ্গে গর্ভকালীন কোনো ধরনের জটিলতা সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে অতিরিক্ত চা- কফি খেলে বদহজম কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে। এ কারণে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা- কফি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। হরমোনের তারতম্য, ঘুমের ব্যাঘাত এবং কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে চা- কফির সম্পর্ক রয়েছে। গর্ভাবস্থায় চা- কফির পরিমাণ সীমিত রাখার পাশ-পাশি তা গ্রহণের জন্য সঠিক সময়টা বেছে নেওয়া প্রয়োজন।

কতটা চা-কফি খাওয়া যাবে…??
গর্ভাবস্থায় রোজ এক বেলা চা কিংবা কফি খাওয়া যেতে পারে। পরিমাণটাও খুব বেশি নয়। গড়পড়তা মাপের একটি কাপ পূর্ণ করে নিতে পারেন। কারও কারও আবার একটু বেশিই চা কিংবা কফি গ্রহণের অভ্যাস থাকে। চা-কফির প্রতি একধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হতেও দেখা যায়। হঠাৎ করে কিন্তু এই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। হবু মায়ের এ ধরনের নির্ভরশীলতা থেকে থাকলে তিনি যদি নিজেকে চা-কফি থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত রাখেন, তাহলে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। তাই চা-কফি হঠাৎ ছেড়ে দেওয়াও ঠিক নয়। বরং এক বেলার জায়গায় দুইবেলা খেতে পারেন এক কাপ চা কিংবা কফি। মানে আগে হয়তো দুই কাপ দুই বেলায় খেতেন, এখন সেটা কমিয়ে দুই বেলায় এক কাপ করতে পারেন।

কখন খাবেন চা-কফি..??
খালি পেটে চা-কফি খাবেন না। এতে অ্যাসিডিটির প্রবণতা বাড়ে। এই অভ্যাস তাই কারও জন্যই ভালো নয়। হবু মায়েদের অনেকেরই সকালে বমি বা বমিভাব হয়। এই সময় তরল খাবারের চেয়ে বরং শুকনা খাবার গ্রহণ করলে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।

আয়রন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ যে বেলায় গ্রহণ করবেন, সেই বেলায় চা-কফি এড়িয়ে চলুন। এসব ওষুধ গ্রহণের কাছাকাছি সময়ে চা-কফি খাওয়া হলে ওষুধ সঠিকভাবে শোষিত হতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ধরা যাক, আপনি দুপুরে আয়রন গ্রহণ করছেন আর রাতে ক্যালসিয়াম। এ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার সময়টাকে চা-কফি খাওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন।

গর্ভকালে পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। ঘুমের সময়ের আগে দিয়ে চা-কফি গ্রহণ করলে কিংবা সারা দিনে অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি গ্রহণ করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই চা-কফির পাট চুকিয়ে ফেলুন। দুপুরে ঘুমানোর সুযোগ থাকলে বেলা ১১ টার দিকে চা-কফির পর্বটিকে স্থানান্তর করতে পারেন অন্য কোনো সময়ে।

আছে উপকার-ও….
সাধারণ চা-কফির পরিবর্তে গ্রিন টি খেতে পারেন। এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গর্ভাবস্থায় উপকারী। আবার ঠান্ডা-কাশির সমস্যা হলেই কোনো ওষুধ সেবন না করে বরং আগে আদা-লেবু দিয়ে চা খেয়ে দেখতে পারেন। হালকা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে এভাবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি ছাড়াই তা উপশমের সুযোগ থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা !

গর্ভাবস্থায় নারীদের চা-কফি খাওয়া কি বারণ?

Update Time : ০৮:৪৩:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ জনপদ ডেস্ক : এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা কিংবা এক মগভর্তি কফি দিয়ে দিন শুরু করতে ভালোবাসেন কেউ কেউ। কাজের ফাঁকেও চা-কফি গ্রহণের চল রয়েছে। ক্লান্তিকর দিন পেরিয়ে বিকেলের আয়েশি সময়েও অনেকের চা-কফি খাওয়ার ঝোঁক থাকে। সাধারণ সময়ে সে আপনি যা-ই করুন না কেন, একজন নারী যখন মাতৃত্বের প্রথম ধাপ অর্থাৎ, অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, তখন গর্ভের সন্তানের ভালো– মন্দের কথা মাথায় রেখেই তাঁর জীবনযাত্রার ধরনধারণ নির্ধারণ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় খাবারদাবার গ্রহণের বেলায় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। চা-কফির বেলাতেও তাই।

স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ বলেন, চা- কফি গ্রহণের সঙ্গে গর্ভকালীন কোনো ধরনের জটিলতা সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে অতিরিক্ত চা- কফি খেলে বদহজম কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে। এ কারণে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা- কফি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। হরমোনের তারতম্য, ঘুমের ব্যাঘাত এবং কিছু ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে চা- কফির সম্পর্ক রয়েছে। গর্ভাবস্থায় চা- কফির পরিমাণ সীমিত রাখার পাশ-পাশি তা গ্রহণের জন্য সঠিক সময়টা বেছে নেওয়া প্রয়োজন।

কতটা চা-কফি খাওয়া যাবে…??
গর্ভাবস্থায় রোজ এক বেলা চা কিংবা কফি খাওয়া যেতে পারে। পরিমাণটাও খুব বেশি নয়। গড়পড়তা মাপের একটি কাপ পূর্ণ করে নিতে পারেন। কারও কারও আবার একটু বেশিই চা কিংবা কফি গ্রহণের অভ্যাস থাকে। চা-কফির প্রতি একধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হতেও দেখা যায়। হঠাৎ করে কিন্তু এই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। হবু মায়ের এ ধরনের নির্ভরশীলতা থেকে থাকলে তিনি যদি নিজেকে চা-কফি থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত রাখেন, তাহলে মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। তাই চা-কফি হঠাৎ ছেড়ে দেওয়াও ঠিক নয়। বরং এক বেলার জায়গায় দুইবেলা খেতে পারেন এক কাপ চা কিংবা কফি। মানে আগে হয়তো দুই কাপ দুই বেলায় খেতেন, এখন সেটা কমিয়ে দুই বেলায় এক কাপ করতে পারেন।

কখন খাবেন চা-কফি..??
খালি পেটে চা-কফি খাবেন না। এতে অ্যাসিডিটির প্রবণতা বাড়ে। এই অভ্যাস তাই কারও জন্যই ভালো নয়। হবু মায়েদের অনেকেরই সকালে বমি বা বমিভাব হয়। এই সময় তরল খাবারের চেয়ে বরং শুকনা খাবার গ্রহণ করলে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।

আয়রন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ যে বেলায় গ্রহণ করবেন, সেই বেলায় চা-কফি এড়িয়ে চলুন। এসব ওষুধ গ্রহণের কাছাকাছি সময়ে চা-কফি খাওয়া হলে ওষুধ সঠিকভাবে শোষিত হতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ধরা যাক, আপনি দুপুরে আয়রন গ্রহণ করছেন আর রাতে ক্যালসিয়াম। এ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার সময়টাকে চা-কফি খাওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন।

গর্ভকালে পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। ঘুমের সময়ের আগে দিয়ে চা-কফি গ্রহণ করলে কিংবা সারা দিনে অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি গ্রহণ করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই চা-কফির পাট চুকিয়ে ফেলুন। দুপুরে ঘুমানোর সুযোগ থাকলে বেলা ১১ টার দিকে চা-কফির পর্বটিকে স্থানান্তর করতে পারেন অন্য কোনো সময়ে।

আছে উপকার-ও….
সাধারণ চা-কফির পরিবর্তে গ্রিন টি খেতে পারেন। এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গর্ভাবস্থায় উপকারী। আবার ঠান্ডা-কাশির সমস্যা হলেই কোনো ওষুধ সেবন না করে বরং আগে আদা-লেবু দিয়ে চা খেয়ে দেখতে পারেন। হালকা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে এভাবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি ছাড়াই তা উপশমের সুযোগ থাকে।