ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমি অফিসের পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক!

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর প্রতিনিধি:

রংপুরের গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক ভূপতি চন্দ্র সরকারকে পীরগঞ্জের শিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। অদ্য মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক আদেশে তাকে বদলির কথা জানান গঙ্গাচড়া সহকারী কমিশনার ভূমি জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি।

গত ১০ সেপ্টেম্বর পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক ভূপতি এই শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। জানা যায়, গঙ্গাচড়া ভূমি অফিসের পিয়ন পদে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে ভূপতি চন্দ্র সরকার (৫০) কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি বাবার পৈত্রিক সম্পতি হিসেবে পেয়েছিলেন মাত্র ৪ শতক বসতবাড়ি। তার অন্য তিন ভাইও বাবার বসতবাড়ির সমান ভাগ পান। দুই ভাই মারা গেছেন।

ভাইয়েরা এক শতকও জমি কিনতে না পারলেও ভূপতি মহন্ত কিনেছেন ৪ থেকে ৫ একর আবাদি জমি। গ্রামে নির্মাণ করেছেন বিলাস বহুল দু’টি বাড়ি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ৪ কোটি টাকায় কিনেছেন রংপুর নগরীতে সাত শতক এবং কোটি টাকায় গঙ্গাচড়া বাজার এলাকায় ৮ শতক জমি। তিনি শ্বশুর বাড়ি এলাকায়ও কিনেছেন নামে-বেনামে অবাদি জমি। আছে স্ত্রীর নামে ব্যাংক ব্যালেন্সও।স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার ভূপতি সরকারের ।বড় ছেলে শুভ চন্দ্র এসএসসি পাশ করে আর কলেজে ভর্তি হয়নি।

দ্বিতীয় ছেলে সজিব চন্দ্র মহন্ত একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাস তৃতীয়বর্ষে অধ্যায়নরত। পিয়ন পদে এ সামান্য বেতনে চাকরি করে তাঁর এত সম্পদ অর্জন নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন এলাকার মানুষ।তিনি গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পিয়ন পদেই কর্মরত ছিলেন।সেখানে সেবা নিতে আসা লোকজন তাকেই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে চিনেন। তার চা, পান ও অফিস পরিস্কার রাখা কাজ হলেও তিনি অফিসিয়াল যাবতীয় কাজ করেন। জমির নামজারি করে দেওয়ার নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও কারও জমির কাগজপত্রে ভেজাল থাকলে সেটি নিয়েও তিনি দেনদরবার করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এছাড়াও ভূপতি চন্দ্র সরকার লন্ডন প্রবাসী আজিজুলের জমি লিখে দেওয়ার কথা বলে উপজেলার পশ্চিম চেংমারী গ্রামের সুজন মিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ, মেরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ৭৫ হাজার এবং মমতাজ বেগমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এবিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে সরজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশ করেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর রংপুর,মাহমুদ হাসান মৃধা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পিয়ন পদে চাকরি করে এত টাকার সম্পদ অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’ রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আব্দুল মান্নান আর-ও বলেন, ‘কোন টাকায় ওই পিয়ন এত সম্পদের মালিক হয়েছে তা তদন্ত করা দেখা হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা !

ভূমি অফিসের পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক!

Update Time : ০১:৪১:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর প্রতিনিধি:

রংপুরের গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক ভূপতি চন্দ্র সরকারকে পীরগঞ্জের শিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। অদ্য মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক আদেশে তাকে বদলির কথা জানান গঙ্গাচড়া সহকারী কমিশনার ভূমি জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি।

গত ১০ সেপ্টেম্বর পিয়ন থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক ভূপতি এই শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। জানা যায়, গঙ্গাচড়া ভূমি অফিসের পিয়ন পদে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে ভূপতি চন্দ্র সরকার (৫০) কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি বাবার পৈত্রিক সম্পতি হিসেবে পেয়েছিলেন মাত্র ৪ শতক বসতবাড়ি। তার অন্য তিন ভাইও বাবার বসতবাড়ির সমান ভাগ পান। দুই ভাই মারা গেছেন।

ভাইয়েরা এক শতকও জমি কিনতে না পারলেও ভূপতি মহন্ত কিনেছেন ৪ থেকে ৫ একর আবাদি জমি। গ্রামে নির্মাণ করেছেন বিলাস বহুল দু’টি বাড়ি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ৪ কোটি টাকায় কিনেছেন রংপুর নগরীতে সাত শতক এবং কোটি টাকায় গঙ্গাচড়া বাজার এলাকায় ৮ শতক জমি। তিনি শ্বশুর বাড়ি এলাকায়ও কিনেছেন নামে-বেনামে অবাদি জমি। আছে স্ত্রীর নামে ব্যাংক ব্যালেন্সও।স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার ভূপতি সরকারের ।বড় ছেলে শুভ চন্দ্র এসএসসি পাশ করে আর কলেজে ভর্তি হয়নি।

দ্বিতীয় ছেলে সজিব চন্দ্র মহন্ত একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাস তৃতীয়বর্ষে অধ্যায়নরত। পিয়ন পদে এ সামান্য বেতনে চাকরি করে তাঁর এত সম্পদ অর্জন নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন এলাকার মানুষ।তিনি গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পিয়ন পদেই কর্মরত ছিলেন।সেখানে সেবা নিতে আসা লোকজন তাকেই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে চিনেন। তার চা, পান ও অফিস পরিস্কার রাখা কাজ হলেও তিনি অফিসিয়াল যাবতীয় কাজ করেন। জমির নামজারি করে দেওয়ার নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও কারও জমির কাগজপত্রে ভেজাল থাকলে সেটি নিয়েও তিনি দেনদরবার করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এছাড়াও ভূপতি চন্দ্র সরকার লন্ডন প্রবাসী আজিজুলের জমি লিখে দেওয়ার কথা বলে উপজেলার পশ্চিম চেংমারী গ্রামের সুজন মিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ, মেরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ৭৫ হাজার এবং মমতাজ বেগমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এবিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে সরজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশ করেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর রংপুর,মাহমুদ হাসান মৃধা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পিয়ন পদে চাকরি করে এত টাকার সম্পদ অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’ রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আব্দুল মান্নান আর-ও বলেন, ‘কোন টাকায় ওই পিয়ন এত সম্পদের মালিক হয়েছে তা তদন্ত করা দেখা হবে।’