ঢাকা ০২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালিশপুরে জুটমিল কারখানা কমিটির বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা

খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির বিক্ষোভ মিছিল ও গেট সমাবেশে বক্তারা বলেন, লিজ প্রথা বাতিল, পাটকল চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করুন। এবং পাটকল’সহ বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত করে আধুনিকরেন মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চালু, শ্রমিকদের সকল পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদান, মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতিযুক্ত বিজেএমসির সংস্কার করাসহ তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব, খুলনা বিভাগীয় সাবেক শ্রম পরিচালক মিজানুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার, যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লিজ দেয়া হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন আছে।

সেগুলো বাতিল ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এক্ট কার্যকর করা, কাঁচাপাট সরাসরি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃক যে সকল ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং খুলনায় আন্দোলন চলাকালীন শ্রমিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অদ্য ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৪ টায় খালিশপুর জুটমিল গেটচত্বরে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সহ-সভাপতি মোঃ ডালিম কাজী। গেট সমাবেশের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন শ্রমিকনেতা নাসির উদ্দীন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির আহবায়ক ও খালিশপুর জুটমিলের সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবীর,খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির উপদেষ্টা মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ ইলিয়াস হোসেন, মোঃ শফীউদ্দীন, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর উপজেলার আহবায়ক রাফেজা বেগম, সদস্য সচিব ও জেজেআই শ্রমিকনেতা সামস সারফিন সামন, শ্রমিকনেতা আবুল কালাম, মোঃ উজ্জ্বল, মোঃ সোহেল প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনা মহামারির সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলসহ সারাদেশের ২৬ টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ পাটসংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। আকষ্মিক বন্ধের ফলে পাটকলশ্রমিকদের জীবন-জীবিকা স্থবির হয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে বিগত সরকার শ্রমিকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রমিকরা তখন তাদের কর্মস্থল থেকে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো খাবারের জন্য, চাকরী ফিরে পাবার আশায় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়। বক্তারা বলেন, পাটকল শ্রমিকরা আংশিক বেতন পেলেও সঠিক হিসাব অনুযায়ী সকল পাওনাদি এখনো পর্যন্ত পায়নি। এমনকি খুলনার খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি ও আর আর জুট মিলের শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি। এসমস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবন কি দুর্বিষহ অবস্থায় চলছে তা একমাত্র তারাই জানেন। নিষ্ঠুরভাবে পাটকল বন্ধ, বকেয়া প্রদানে গড়িমসি ও ষড়যন্ত্রের শিকার শ্রমিকরা।

সরকারের কাছে শ্রমিকদের এই দাবি একটি গণতান্ত্রিক দাবি, ন্যায্যত এটি শ্রমিকদের অধিকারও বটে। আমাদের যে বকেয়া পাওনা তা কোন করুণা নয়, এটা আামাদের ন্যায্য পাওনা। এই পাওনা মিটিয়ে দিতে হবেই, হবে।উল্লেখ্যসবচেয়ে বিষ্ময়কার ঘটনা হলো, বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।কয়েকটি মিল ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া হয়েছে, ক্রিসেন্ট জুটমিল লিজ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে।কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট, চুরি ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে বন্ধকৃত পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও শ্রমিকদের সম্পর্ণ বকেয়া পরিশোধের জোর দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল খালিশপুর জুটমিল গেট থেকে শুরু হয়ে দৌলতপুর জুটমিল গেটের সামনে এসে শেষ হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খালিশপুরে জুটমিল কারখানা কমিটির বিক্ষোভ

Update Time : ০৪:১৯:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা

খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির বিক্ষোভ মিছিল ও গেট সমাবেশে বক্তারা বলেন, লিজ প্রথা বাতিল, পাটকল চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করুন। এবং পাটকল’সহ বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত করে আধুনিকরেন মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চালু, শ্রমিকদের সকল পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদান, মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতিযুক্ত বিজেএমসির সংস্কার করাসহ তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব, খুলনা বিভাগীয় সাবেক শ্রম পরিচালক মিজানুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার, যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লিজ দেয়া হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন আছে।

সেগুলো বাতিল ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এক্ট কার্যকর করা, কাঁচাপাট সরাসরি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃক যে সকল ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং খুলনায় আন্দোলন চলাকালীন শ্রমিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অদ্য ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৪ টায় খালিশপুর জুটমিল গেটচত্বরে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সহ-সভাপতি মোঃ ডালিম কাজী। গেট সমাবেশের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন শ্রমিকনেতা নাসির উদ্দীন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির আহবায়ক ও খালিশপুর জুটমিলের সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবীর,খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির উপদেষ্টা মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ ইলিয়াস হোসেন, মোঃ শফীউদ্দীন, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর উপজেলার আহবায়ক রাফেজা বেগম, সদস্য সচিব ও জেজেআই শ্রমিকনেতা সামস সারফিন সামন, শ্রমিকনেতা আবুল কালাম, মোঃ উজ্জ্বল, মোঃ সোহেল প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনা মহামারির সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলসহ সারাদেশের ২৬ টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ পাটসংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। আকষ্মিক বন্ধের ফলে পাটকলশ্রমিকদের জীবন-জীবিকা স্থবির হয়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে বিগত সরকার শ্রমিকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রমিকরা তখন তাদের কর্মস্থল থেকে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো খাবারের জন্য, চাকরী ফিরে পাবার আশায় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়। বক্তারা বলেন, পাটকল শ্রমিকরা আংশিক বেতন পেলেও সঠিক হিসাব অনুযায়ী সকল পাওনাদি এখনো পর্যন্ত পায়নি। এমনকি খুলনার খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি ও আর আর জুট মিলের শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি। এসমস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবন কি দুর্বিষহ অবস্থায় চলছে তা একমাত্র তারাই জানেন। নিষ্ঠুরভাবে পাটকল বন্ধ, বকেয়া প্রদানে গড়িমসি ও ষড়যন্ত্রের শিকার শ্রমিকরা।

সরকারের কাছে শ্রমিকদের এই দাবি একটি গণতান্ত্রিক দাবি, ন্যায্যত এটি শ্রমিকদের অধিকারও বটে। আমাদের যে বকেয়া পাওনা তা কোন করুণা নয়, এটা আামাদের ন্যায্য পাওনা। এই পাওনা মিটিয়ে দিতে হবেই, হবে।উল্লেখ্যসবচেয়ে বিষ্ময়কার ঘটনা হলো, বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।কয়েকটি মিল ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া হয়েছে, ক্রিসেন্ট জুটমিল লিজ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে।কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট, চুরি ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে বন্ধকৃত পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও শ্রমিকদের সম্পর্ণ বকেয়া পরিশোধের জোর দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল খালিশপুর জুটমিল গেট থেকে শুরু হয়ে দৌলতপুর জুটমিল গেটের সামনে এসে শেষ হয়।