ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ১৩ শতাংশ মানুষ চোখের গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে

দেশে ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ১৩ জন চোখের স্থায়ী অন্ধত্বজনিত রোগ গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে ৩ দশমিক ২ জন মারাত্মকভাবে গ্লুকোমায় আক্রান্ত এবং ১০ জন সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ এবং সন্দেহভাজন রোগী ৫০ লাখ। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি’র উদ্যোগে ২০২২ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত এক জরিপে এই চিত্র ওঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা রোগের প্রকোপ ও সামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গ্লুকোমা সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শেখ এমএ মান্নাফ।

এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গ্লুকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, এশিয়া প্যাসেফিক অপথলমোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. দীন মোহাম্মাদ নূরুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

জরিপের তথ্যে আরও জানানো হয়, দেশে গত ২০ বছরে পূর্বের তুলনায় গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় এই গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীর হার অনেক বেশি।

জানানো হয়, জরিপটিতে সর্বমোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার জন, যেখানে পুরুষ ৫ হাজার ৯৫৩ জন এবং নারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৭ জন। তাদের মধ্যে শহুরে মানুষ ৩ হাজার ৭৯০ জন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ছিলেন ৯ হাজার ২১০ জন। জরিপে সর্বমোট ৩৮৬ জনের চোখে গ্লুকোমা শনাক্ত হয়েছে, যা শতকরা প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গ্লুকোমা শনাক্ত ৩৮৬ জনের মধ্যে ৩০৩টিতে প্রাইমারি ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, যা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়াও প্রাইমারি ক্লোজার গ্লুকোমা পাওয়া গেছে ৬২ জনের মধ্যে, যা শতকরা বিবেচনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়াও বাকি ২১ জনের সেকেন্ডারি গ্লুকোমা (৫ দশমিক ৬ শতাংশ) পাওয়া গেছে।

ডা. মান্নাফ বলেন, এর আগে দেশে গ্লুকোমা নিয়ে ২০০২ সালে একটা জরিপ হয়েছিল, তখন দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগী ছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে আমরা যে জরিপ করেছি, সেখানে গ্লুকোমা রোগী পেয়েছি ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এমনকি শতকরা ১০ জন মানুষ পেয়েছি যারা গ্লুকোমা সন্দেহভাজন। তারা গ্লুকোমা আক্রান্ত হওয়ার পাইপলাইনে আছে।

জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় এই রোগী বেশি। আবার লিঙ্গ বিবেচনায় নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি পাওয়া গেছে। এমনকি বরিশালের পুরুষের মধ্যে কম এবং ময়মনসিংহের পুরুষদের মধ্যে রোগটি বেশি পাওয়া গেছে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে বরিশালে বেশি ও ময়মনসিংহে কম দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশে এই মুহূর্তে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯০ জন এবং নারীর সংখ্যা ৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ জন। এ ছাড়াও গ্লুকোমা সন্দেহভাজন রোগী আছে ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৯ জন, যাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ জন এবং নারী ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৪ জন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ বলেন, গ্লুকোমা চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের প্রধান কারণ। এ রোগে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না বলে রোগী সমস্যা বুঝতে পারে না। গ্লুকোমা রোগীদের চোখে উচ্চচাপ থাকে। চাপের ফলে চোখের নার্ভ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রথম দিকে চারপাশে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় দৃষ্টি ভালো থাকে। রোগটিতে অন্ধত্ব বরণ করলে আর দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যায় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে ১৩ শতাংশ মানুষ চোখের গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে

Update Time : ০৫:৫৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

দেশে ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ১৩ জন চোখের স্থায়ী অন্ধত্বজনিত রোগ গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে ৩ দশমিক ২ জন মারাত্মকভাবে গ্লুকোমায় আক্রান্ত এবং ১০ জন সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ এবং সন্দেহভাজন রোগী ৫০ লাখ। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি’র উদ্যোগে ২০২২ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত এক জরিপে এই চিত্র ওঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা রোগের প্রকোপ ও সামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গ্লুকোমা সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শেখ এমএ মান্নাফ।

এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গ্লুকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, এশিয়া প্যাসেফিক অপথলমোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. দীন মোহাম্মাদ নূরুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

জরিপের তথ্যে আরও জানানো হয়, দেশে গত ২০ বছরে পূর্বের তুলনায় গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় এই গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীর হার অনেক বেশি।

জানানো হয়, জরিপটিতে সর্বমোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার জন, যেখানে পুরুষ ৫ হাজার ৯৫৩ জন এবং নারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৭ জন। তাদের মধ্যে শহুরে মানুষ ৩ হাজার ৭৯০ জন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ছিলেন ৯ হাজার ২১০ জন। জরিপে সর্বমোট ৩৮৬ জনের চোখে গ্লুকোমা শনাক্ত হয়েছে, যা শতকরা প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গ্লুকোমা শনাক্ত ৩৮৬ জনের মধ্যে ৩০৩টিতে প্রাইমারি ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, যা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়াও প্রাইমারি ক্লোজার গ্লুকোমা পাওয়া গেছে ৬২ জনের মধ্যে, যা শতকরা বিবেচনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়াও বাকি ২১ জনের সেকেন্ডারি গ্লুকোমা (৫ দশমিক ৬ শতাংশ) পাওয়া গেছে।

ডা. মান্নাফ বলেন, এর আগে দেশে গ্লুকোমা নিয়ে ২০০২ সালে একটা জরিপ হয়েছিল, তখন দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগী ছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে আমরা যে জরিপ করেছি, সেখানে গ্লুকোমা রোগী পেয়েছি ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এমনকি শতকরা ১০ জন মানুষ পেয়েছি যারা গ্লুকোমা সন্দেহভাজন। তারা গ্লুকোমা আক্রান্ত হওয়ার পাইপলাইনে আছে।

জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় এই রোগী বেশি। আবার লিঙ্গ বিবেচনায় নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি পাওয়া গেছে। এমনকি বরিশালের পুরুষের মধ্যে কম এবং ময়মনসিংহের পুরুষদের মধ্যে রোগটি বেশি পাওয়া গেছে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে বরিশালে বেশি ও ময়মনসিংহে কম দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশে এই মুহূর্তে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯০ জন এবং নারীর সংখ্যা ৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ জন। এ ছাড়াও গ্লুকোমা সন্দেহভাজন রোগী আছে ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৯ জন, যাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ জন এবং নারী ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৪ জন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ বলেন, গ্লুকোমা চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের প্রধান কারণ। এ রোগে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না বলে রোগী সমস্যা বুঝতে পারে না। গ্লুকোমা রোগীদের চোখে উচ্চচাপ থাকে। চাপের ফলে চোখের নার্ভ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রথম দিকে চারপাশে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় দৃষ্টি ভালো থাকে। রোগটিতে অন্ধত্ব বরণ করলে আর দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যায় না।