ঢাকা ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাত পোহালেই ভোলা’সহ সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বাংলাদেশ জনপদ ডেস্ক: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা শুরু করবে সরকার। এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ২ সেপ্টেম্বর রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযানে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী থাকবে মাঠে। প্রস্তুতি হিসেবে অদ্য সোমবার সব জেলায় সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সদস্যদের সমন্বয়ে কোর কমিটি গঠন করে সভা করবেন। সভায় স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করা হবে।

বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও ২০০৯ সাল থেকে লাইসেন্স পাওয়া সব অস্ত্র থানায় জমা দিতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপর লাইসেন্সকৃত ও অবৈধ অস্ত্র যার কাছে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলার করা হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি ব্যাপক হারে প্রচার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া থানাসহ পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও এই সময়ে উদ্ধার করা হবে বলে জানা গেছে।

যৌথ অভিযানের বিষয়ে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ ময়নুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর কারও কাছে কোনো অস্ত্র থাকলে সেটি অবৈধ বলে গণ্য হবে। ৪ সেপ্টেম্ব থেকে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে বৈধ- অবৈধ ও লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স গ্রহীতাকে এস এম এ সে র (খুদেবার্তা) মাধ্যমে লাইসেন্স স্থগিত এবং স্থগিতকৃত লাইসেন্সের অনুকূলে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার বিষয়টি অবহিত করতে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বুধবার থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রণীত স্থগিতকৃত লাইসেন্সধারীদের তালিকা এবং নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত জমাকৃত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা আগামী বৃহস্পতিবার পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থায় পাঠাবেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০ টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬ টি। এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ৪ হাজার ৬৮৩ টি, রিভলবার ২ হাজার ৪৩ টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯ টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯ টি, শটগান ৫ হাজার ৪৪৪ টি, রাইফেল ১ হাজার ৭০৬ টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৪ হাজার ৬ টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা। প্রাপ্ত হিসাব বলছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১০ হাজার ২১৫ টি রয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে ৭ হাজার ২১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপির নেতাকর্মীর কাছে ২ হাজার ৫৮৭ টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নামে ৭৯ টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের মারাত্মক অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ সময়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নিশ্চুপ ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট ও পূর্ববর্তী সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা যায়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গত ৬ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ভিন্ন ধরনের ৩ হাজার ৮৮০ জমা পড়েছে। গোলাবারুদের মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২ হাজার ২০১ রাউন্ড টিয়ার শেল এবং ২ হাজার ১৩৯ টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যা !

রাত পোহালেই ভোলা’সহ সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

Update Time : ০৮:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ জনপদ ডেস্ক: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা শুরু করবে সরকার। এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ২ সেপ্টেম্বর রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযানে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী থাকবে মাঠে। প্রস্তুতি হিসেবে অদ্য সোমবার সব জেলায় সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। পুলিশ সুপার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সদস্যদের সমন্বয়ে কোর কমিটি গঠন করে সভা করবেন। সভায় স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করা হবে।

বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও ২০০৯ সাল থেকে লাইসেন্স পাওয়া সব অস্ত্র থানায় জমা দিতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপর লাইসেন্সকৃত ও অবৈধ অস্ত্র যার কাছে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলার করা হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি ব্যাপক হারে প্রচার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া থানাসহ পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও এই সময়ে উদ্ধার করা হবে বলে জানা গেছে।

যৌথ অভিযানের বিষয়ে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ ময়নুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর কারও কাছে কোনো অস্ত্র থাকলে সেটি অবৈধ বলে গণ্য হবে। ৪ সেপ্টেম্ব থেকে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে বৈধ- অবৈধ ও লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স গ্রহীতাকে এস এম এ সে র (খুদেবার্তা) মাধ্যমে লাইসেন্স স্থগিত এবং স্থগিতকৃত লাইসেন্সের অনুকূলে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার বিষয়টি অবহিত করতে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বুধবার থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রণীত স্থগিতকৃত লাইসেন্সধারীদের তালিকা এবং নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত জমাকৃত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা আগামী বৃহস্পতিবার পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থায় পাঠাবেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০ টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬ টি। এসব অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ৪ হাজার ৬৮৩ টি, রিভলবার ২ হাজার ৪৩ টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯ টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯ টি, শটগান ৫ হাজার ৪৪৪ টি, রাইফেল ১ হাজার ৭০৬ টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৪ হাজার ৬ টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা। প্রাপ্ত হিসাব বলছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১০ হাজার ২১৫ টি রয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে ৭ হাজার ২১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপির নেতাকর্মীর কাছে ২ হাজার ৫৮৭ টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নামে ৭৯ টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের মারাত্মক অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ সময়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নিশ্চুপ ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট ও পূর্ববর্তী সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা যায়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গত ৬ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ভিন্ন ধরনের ৩ হাজার ৮৮০ জমা পড়েছে। গোলাবারুদের মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২ হাজার ২০১ রাউন্ড টিয়ার শেল এবং ২ হাজার ১৩৯ টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে।